রোববার মোহাম্মদপুরে বসিলা ব্রিজ এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীতে গণগোসল কর্মসূচিতে অংশ নেন অনেকে। ছবি: নিউজবাংলা
বিশ্ব পরিবেশ দিবসে দেশের সব নদী ও এর পরিবেশ বাঁচাতে বুড়িগঙ্গায় ‘গণগোসল’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
ব্যতিক্রমী উদ্যোগটি নিয়েছে জেসিআই ঢাকা নর্থ, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।
বুড়িগঙ্গার পানি গোসলের উপযোগী করতে এবং দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ার দাবিতে এই আয়োজন। একইসঙ্গে প্রতিনিয়ত যারা বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণের শিকার হচ্ছেন তাদের পাশেও দাঁড়াতে চায় সংগঠনগুলো।
রোববার সকাল ১১টায় মোহাম্মদপুরের বসিলা ব্রিজ এলাকায় এই কর্মসূচি শুরু হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশ কর্মীরা দুপুর ১২টা পর্যন্ত পরিবেশ, বুড়িগঙ্গার দূষণ ও এর প্রতিকার নিয়ে বক্তব্য দেন। এরপর শুরু হয় ‘গণগোসল’। তা চলে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত।
কর্মসূচিতে নদীপাড়ের মানুষ, পরিবেশকর্মী, গবেষক, শিক্ষক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, যুব নেতৃবৃন্দ ও মিডিয়া কর্মীসহ কয়েকশ’ মানুষ অংশ নেন।
কর্মসূচিতে অংশ নেয়াদের একজন সাজিদ মিয়া। দূষণের শিকার বুড়িগঙ্গায় গোসল সেরে তিনি বলেন, ‘পানি এখনো অনেক নোংরা। তবে গন্ধ নেই। এখন তো যা হোক বর্ষার কারণে পানি স্বচ্ছ দেখাচ্ছে। কিন্তু শীতের সময় বুড়িগঙ্গার পানিতে প্রকট দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এই গন্ধের কারণে তখন নদীর পাড়ে টেকাও দায় হয়ে দাঁড়ায়।’
বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ‘বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার আশপাশের সব নদ-নদীর পানি ভয়াবহ দূষণের শিকার। এসব নদীর পানিতে গোসল করাটাও নিরাপদ নয়। বুড়িগঙ্গার পানি সারা বছর দূষিত থাকে। ট্যানারি দূষণ, টেক্সটাইলের দূষণ কয়েক বছর ধরে এই নদীতে যুক্ত হয়েছে। আর শ্যামপুর থেকে তো ডাইং দূষণ আছেই।’
শরীফ জামিল বলেন, ‘বুড়িগঙ্গা পাড়ের মানুষ সারা বছরই নদীতে গোসল করে। আজকের এই কর্মসূচি প্রতীকী। আমরা যারা প্রতিদিন বুড়িগঙ্গায় আসি না, তারা আজ এই কর্মসূচির মাধ্যমে নদীতীরের মানুষের প্রতি সংহতি জানাচ্ছি।
‘আজ এই পরিবেশ দিবসে আমাদের দাবি হচ্ছে- বুড়িগঙ্গাসহ দেশের সব নদী অবশ্যই দূষণমুক্ত করতে হবে। স্থানীয়রা যেন বুড়িগঙ্গায় নিরাপদে গোসল ও গৃহস্থালির কাজে এই পানি ব্যবহার করতে পারে। সে লক্ষ্যে সরকারকে সত্যিকার অর্থে একটি জনবান্ধব, জনসম্পৃক্ত ও বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা নিতে হবে। সেই পরিকল্পনায় ডিটেইল রোডম্যাপও থাকতে হবে।’
কর্মসূচিতে রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মো. এজাজ বলেন, ‘২০০৯ সালে হাইকোর্ট ঢাকার চার নদীকে ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল ঘোষণা করে। আজ ২০২২ সাল চলে এসেছে। এই লম্বা সময়ে বুড়িগঙ্গা এবং এর সঙ্গে যে চারটি নদী আছে সেগুলোর স্বাস্থ্যের কোনো উন্নতি হয়নি; বরং অবনতি হয়েছে।
‘আমরা অনেক কাজ করেছি, কথা বলেছি, মিডিয়া অনেক কথা বলছে। কিন্তু সরকারের দপ্তরগুলো এগুলোর জন্য দায়ী। তাদের কারণে দিন দিন নদী দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
মো. এজাজ বলেন, ‘আমরা চিন্তা করলাম- আর বসে না থেকে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরাই নদীতে নেমে যাব। তারা নদীর অবস্থা যত খারাপই করুক না কেন আমরা নদীতে নেমে গোসল করে নদীর পাড়ে বসবাসকারীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করব।’
রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার একটি গবেষণা করেছে। এই গবেষণার তথ্য উল্লেখ করে সংগঠনটির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় বুড়িগঙ্গায় ২৫১টি সুয়ারেজ লাইনের সংযোগ পেয়েছি। ওয়েস্ট ডাম্পিং পেয়েছি ২৩১টি। এগুলোকে রিমুভ কিংবা ম্যানেজের মধ্যে আনতে পারলে আমরা নতুন বুড়িগঙ্গা দেখতে পাব।’
মূল উৎসঃ নদী বাঁচাতে বুড়িগঙ্গায় ‘গণগোসল’ (newsbangla24.com)