দূষিত বর্জ্যে অস্তিত্বসংকটে সুতাং নদী, ছড়িয়ে পড়ছে নানা রোগ

বিগঞ্জে দূষিত বর্জ্যে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে সুতাং নদী। গত ১৫ বছরে জেলার অলিপুর এলাকায় গড়ে ওঠা ছোট বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিষ্কাশিত দূষিত বর্জ্যে সুতাং নদীর পানি কালো রং ধারণ করেছে। হারিয়েছে তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য। অন্যদিকে নদীতীরবর্তী বিভিন্ন গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পড়েছেন চর্মরোগ, শ্বাসকষ্টসহ চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। নদীর পানি পান করে গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি মরে যাওয়া ছাড়াও নদী থেকে হারিয়ে গেছে দেশি প্রজাতির মাছ। সেচ কার্যে নদীর বিষাক্ত পানি ব্যবহার করায় ফসল উৎপাদনও আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

লাখাই প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আশিষ দাশ গুপ্ত জানান, বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে নিষ্কাশিত বর্জ্য শৈলজুড়া খাল হয়ে সুতাং নদীতে পড়ে বিস্তীর্ণ এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের শেষে সুতাং নদীর বেলেশ্বরী নামক স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী পুণ্যস্নান অনুষ্ঠান করাও এখন দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি)-এর উদ্যোগে দেশের ৫৬টি প্রধান নদনদীর দূষণ নিয়ে এক বছরব্যাপী গবেষণা করা হয়। গবেষণায় ৫৬টি নদীর মধ্যে তিনটি নদী সবচেয়ে দূষিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দূষিত তিনটি নদীর মধ্যে রয়েছে :হবিগঞ্জের সুতাং, গাজীপুরের লবণদহ ও নরসিংদীর হাঁড়িধোয়া নদী।

গবেষকরা বলছেন, শিল্পকারখানার বর্জ্য, প্লাস্টিক ও ময়লা ফেলার স্থান হিসেবে এ নদীগুলো ব্যবহার করায় মারাত্মক দূষণের কারণে নদীগুলোতে জলজপ্রাণীর অস্তিত্বও হুমকির সম্মুখীন। নদীগুলোকে আগের রূপে ফিরিয়ে দিতে শিল্প কারখানা, পয়োনিস্কাশন ও বর্জ্য নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল লাখাই উপজেলায় সুতাং নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকা সফর করে এসে জানান, দেশের বৃহৎ অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান অপরিকল্পিতভাবে এবং গোপনে শৈলজুড়া খালের মাধ্যমে বর্জ্য নিষ্কাশন করে সুতাং নদীতে ফেলায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নদীর তলদেশে বিষাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত বর্জ্যের স্তর পড়েছে। সুতাং নদী দূষণের জন্য দায়ী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। তিনি জানান, ইদানীং শৈলজুড়া খাল পুনঃখননের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। যদি এই খাল পুনঃখনন করা হয় তাহলে উপকার না হয়ে অপূরণীয় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

জেলা বাপা সভাপতি অধ্যক্ষ ইকরামুল ওয়াদুদ বলেন, সংকটে পড়া সুতাং নদীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে না আনতে পারলে বিস্তীর্ণ এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যে দীর্ঘমেয়াদি বৈরী প্রভাব পড়বে। এদিকে, গত ২০ জুন হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সুতাং নদীর দূষণ রোধ কল্পে নদীটি খননের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সভায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চিফ হাইড্রোলজিস্ট মো. আখতারুজ্জামান তালুকদার ও পরিচালক ড. খ. ম. কবিরুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মূল উৎসঃ দূষিত বর্জ্যে অস্তিত্বসংকটে সুতাং নদী, ছড়িয়ে পড়ছে নানা রোগ (ittefaq.com.bd)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *