বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় পুকুর, বিল ও লেক আছে ৩২৭ টি। এরমধ্যে পুকুর রয়েছে ২৪১টি আর বিল ও লেক ৮৬টি। তবে বেশিরভাগ পুকুরই ভরাট করে নির্মাণ করা হয় দালানকোঠা। যেসব পুকুরের আকৃতি তুলনামূলক ছোট সেগুলো সহজেই দ্রুত দখল ও ভরাটের শিকার হচ্ছে। রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) তথ্যমতে, নগরীর ৯০ শতাংশ ছোট পুকুর দখল ও ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘ঢাকায় পুকুর ও জলাধারের প্রয়োজনীয়তা এবং সংরক্ষণে করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়। সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ)। সহ আয়োজক হিসেবে ছিল গেন্ডারিয়া ডি আই টি প্লট পুকুর রক্ষা আন্দোলন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ। প্রবন্ধে ঢাকার পুকুর, জলাধার, খাল বিলের নানা বিষয়ের চিত্র তুলে ধরা হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা গবেষণা করে দেখেছি, ঢাকায় বর্তমানে মোট ৬৩টি খাল, ১৩টি লেক ও একটি আদি চ্যানেলের অস্তিত্ব রয়েছে। সরকারিভাবে জলাধারের এখনও তালিকা প্রকাশ হয়নি। নিজেদের প্রয়োজনে এসব পুকুর ও জলাধার রক্ষা করতে হবে। আইন অনুযায়ী যে কোনও ধরনের জলাধার ভরাট নিষিদ্ধ। ব্যক্তি মালিকালাধীন হলেও জলাধার ভরাট করা যে যাবে না, এ ব্যাপারে রাজউকে সার্কুলার ইস্যু করতে পারে। রাজউক আরও সক্ষম ও সক্রিয় হলে ঢাকার জলাধার রক্ষা পাবে। প্রতিটি পুকুরের সামনে এখনই সাইনবোর্ড টানিয়ে দিতে হবে।’
পুকুর ও জলাশয় দখলের চিত্র তুলে তিনি বলেন, ঢাকার ৩২৭টি পুকুর ও জলাশয়ের মধ্যে ২৪১টি দখলমুক্ত রয়েছে এবং দখল হচ্ছে ৮৬ টি। এরমধ্যে সরকারি দখলে ৬টি আর বেসরকারিভাবে ৭৯টি।
ঢাকার জলাধার ও সবুজভূমি কমে যাওয়ার কারণ বিষয়ে তিনি বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের নামে জলাশয় ভরাট ও সবুজ এলাকা নিধন, জলাশয় সংরক্ষণ আইন না জানা, আইনি জটিলতা ও স্থানীয় রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি, রাজউক এর সমন্বয়ের অভাব সহ নানা কারণ রয়েছে।
ঢাকা ৪ আসনের সংসদ সদস্য আবু হোসেন বাবলা বলেন, ঢাকার যেই পুকুর রয়েছে সেগুলো সংরক্ষণ করা উচিত। আমি কথা দিলাম, আগামী সংসদে পরিবেশের ওপর কথা বলবো। ঢাকাসহ দেশের পুকুর জলাধার সংরক্ষণের বিষয়টি সংসদে তুলবো।
তিনি আরও বলেন, সরকার জনগণের জন্যই কাজ করে। আমাদেরকে সঠিক প্রক্রিয়ায় সরকারকে জানাতে হবে। আর যারা দখল করে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করতে হবে।
বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ছোটবেলায় পড়েছি পানিই জীবন। এখন ঢাকায় মনে হচ্ছে বিল্ডিংই জীবন। গত ৫০ বছরে এই পরিবর্তন হয়েছে। আমরা পুকুর, জলাধারের পানি কমে যাওয়ার কথা বলছি। অথচ আমাদের ভূগর্ভস্থ পানিও কিন্তু কমে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানি কতটুকু কমে যাচ্ছে সেটার চিত্র সরকার আমাদের বলা হয় না। ভূগর্ভস্থ পানি তিন মিটার নিচে নেমে গেছে। ফলে আমরা প্রায়ই দেখি এখন ছোট ছোট ভূমিকম্প হচ্ছে।
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ঢাকাকে বসবাসের অযোগ্য বলা হচ্ছে। রাজধানীতে বসবাসের জন্য মানুষ যেখানে কমার কথা সেখানে জলাধার কমেছে আর মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। এখানে যদি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো নগরীর ভালো মেয়রকেও আনা হয় তারপক্ষেও ঢাকা নগরীকে এখন বাসযোগ্য করা সম্ভব হবে না। আমাদের এখন দরকার জলাধার দখলমুক্ত করা।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের উপ-সহকারী পরিচালক বজলুর রশিদ বলেন, অগ্নি নির্বাপনের জন্য পুকুর অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অগ্নি নির্বাপনের জন্য যেসব এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে সেসব এলাকায় যদি পুকুর থাকে তাহলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সহজ হয়।
মূল উৎসঃ ঢাকায় ৯০ শতাংশ ছোট পুকুর ভরাট ও দখলের শিকার (banglatribune.com)